আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির আশায় মিথানল পান করে ইরানে তিনশ মানুষ মারা গেছেন। আর এ ঘটনায় আরও আহত হয়েছেন এক হাজার মানুষ। দেশটিতে কঠোর ইসলামি শরিয়া আইন জারি থাকায় মদপান ও ব্যবসা নিষিদ্ধ। কিন্তু তারপরেও চোরাপথে অ্যালকোহল কিনেন তারা। চোরাকারবারীরা অ্যালকোহেলের জায়গায় শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর মিথানল দিলে না বুঝেই তা পান করায় এই মর্মান্তিক পরিণতি হয়।
চীনের পর এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইরানে। কিন্তু এখন সেখানে করোনার পাশাপাশি এই বিষাক্ত অ্যালকোহল খেয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নেয়নি ইরান সরকার।
সংক্রমণ বাড়ছে দেখে, ইরানে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াতে থাকে একের পর এক গুজব। তারই একটি ছিল, কারখানায় ব্যবহৃত অ্যালকোহল খেলে করোনা সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচা যাবে। আর সেই গুজবে কান দিয়েই কয়েক হাজার মানুষ খেতে শুরু করেন বিষাক্ত মেথানল মেশানো এই অ্যালকোহল। আর তার ফলস্বরূপ এই মৃত্যুমিছিল।
মার্চের শুরুর দিকে ইরানে সংক্রমণ যখন ধীরে ধীরে বাড়ছিল, তখনই গুজব ছড়ায় ব্রিটেনের এক স্কুল শিক্ষকসহ অনেকে মধু এবং হুইস্কি খেয়ে করোনার হাত থেকে বেঁচেছেন। এরপরই এরকম আরও খবর সামনে আসতে থাকে। এরপরই দক্ষিণ-পূর্বের খুজেস্তান প্রদেশ এবং দক্ষিণের শিরাজ প্রদেশের মানুষজন বিষাক্ত অ্যালকোহল খেতে শুরু করেন। ফলে যা হওয়ার তাই হল। করোনার পাশাপাশি বিষাক্ত অ্যালকোহল খেয়ে মৃতের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে।
ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রালয়ের উপদেষ্টা ডাঃ হোসেইন হাসনাইন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘অন্যান্য দেশের একটাই সমস্যা। তারা কেবল করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়ছে। কিন্তু আমাদের করোনার পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়া নয়া এই গুজবের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হচ্ছে।
ইরানে ইতিমধ্যে করোনায় প্রায় আড়াই হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন। মিথানলের বিষক্রিয়া নিয়ে কাজ করা অসলোর ক্লিনিক্যাল টক্সিকোলজিস্ট ডক্টর কনুত এরিক হোভডা মনে করেন, ইরানে করোনাভাইরাস আরও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।
ইরানের ৮ কোটি মানুষ করোনার ঝুঁকিতে রয়েছেন। গোটা বিশ্বের সঙ্গে ইরানেও জোর থাবা বসিয়েছে এই ভাইরাস। রোজই লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। ধরা পড়েছে নতুন আক্রান্ত। বিশ্বে করোনায় মোট মৃত্যু শুক্রবারই ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে।