যশোর প্রতিনিধি: একটি স্বর্ণের চেইনকে কেন্দ্র করে যশোরের শার্শার পল্লীতে জুলেখা খাতুন (২৪) নামের এক গর্ভবতী মা তার নিজের চার বছরের কন্যাসন্তান আমেনা খাতুনকে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছেন। হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি ঘটেছে রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে শার্শা উপজেলার লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী শিকারপুর গ্রামে।
জুলেখা খাতুন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। শার্শা থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
গর্ভবতী মাসহ সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর ধারণা, অপমানের বোঝা সইতে না পেরে জুলেখা তার নিজ কন্যাসন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর নিজে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। গ্রামবাসী সুষ্ঠু তদন্তের পর দোষীদের শাস্তির দাবি করেছে।
জুলেখার চাচা তরিকুল ইসলাম জানান, ৬-৭ মাস আগে শার্শা উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের আলাউদ্দিন গ্যাদনের মেয়ে জুলি বেগম নামের এক নারীর একটি স্বর্ণের চেইন হারিয়ে বা চুরি হয়ে যায়। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে জুলেখা খাতুনের চার বছরের মেয়ে আমেনা চকলেট কিনতে একই এলাকার আলাউদ্দিনের দোকানে গেলে তার মেয়ে জুলি বেগম আমেনার গলা থেকে তার চুরি যাওয়া স্বর্ণের চেইন মনে করে জোরপূর্বক তা খুলে নেয় এবং এলাকার মানুষের সামনে অপমান করে।
এ ঘটনা মেয়ে তার মাকে জানালে জুলেখা খাতুন জুলি বেগমকে বলেন, ‘এটি আমার মায়ের দেয়া চেইন। আমার মা এই স্বর্ণের চেইনটি আমাকে বানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আমার মা ঢাকায় চাকরি করেন বিধায় শুক্রবার ছাড়া এলাকায় আসতে পারবেন না বলে মোবাইল ফোনে তৎক্ষণাৎ জানান।’
প্রমাণ যথাযথ মনে না হওয়ায় স্বর্ণের চেইন খোয়া যাওয়া জুলি বেগম তার বাসায় ফিরে যান। এ ঘটনার জের ধরে হারানো স্বর্ণের চেইনের মালিক জুলি বেগম শিকারপুর গ্রামের জুলেখার স্বামী আল মামুনের বাসায় প্রমাণের জন্য এলে জুলেখার সাথে তার কথা-কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার পর ক্ষোভে ও অপমানে রোববার সকালে সবার অগোচরে জুলেখা খাতুন নিজ সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেন।
জুলেখা খাতুনের মামাতো ননদ একই গ্রামের শরিফুল ইসলামের মেয়ে সীমা খাতুন বলেন, ‘রোববার সকাল ৮টার দিকে ভাবিকে অনেক ডাকাডাকির পর কোনো সাড়াশব্দ না দেয়ায় সন্দেহ হয়। তখন জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখতে পাই ভাবি বাঁশের আড়ার সাথে ঝুলে রয়েছেন। তখন আমার চিৎকারে আশপাশের পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভেঙে লাশ নামানোর পর ঘাটের ওপর আমার ভাইয়ের মেয়ে আমেনার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখি।’
পরে এলাকাবাসী শার্শা থানায় ও স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে খবর দেন। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
জুলেখার স্বামী আল মামুন বলেন, ‘আমার শাশুড়ি রোজার মাসে আমার স্ত্রীকে একটি স্বর্ণের চেইন দিয়েছেন। সে ব্যাপারে আমি অবগত আছি। বিষয়টি প্রমাণের জন্য আমার শাশুড়ির শুক্রবার আসার কথা। আমি রোববার সকালে কাজে যাওয়ার পর আমার ভাইয়ের ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি আমার স্ত্রী মেয়েকে মেরে আত্মহত্যা করেছে।’
নাভারন সার্কেলের এএসপি জুয়েল ইমরান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জুলি বেগম ও তার মাকে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।