![]() |
ছবিতে জাতীয় মানবাধিকার সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মঞ্জুরুল হোসাইন ঈসার ফাইল ছবি |
ডেস্ক নিউজ:
যারা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে, স্বপ্ন দেখাতে ভালবাসে এবং সেই স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভালোবাসে তারা তাদের সিদ্ধান্তে এসে প্রথমেই পছন্দ করে একজন বড় আর্কেটিক হবে। আর সেই মেধাবী ছাত্রের প্রথম এবং প্রিয় ক্যাম্পাস হচ্ছে বুয়েট। যে ক্যাম্পাস ঘিরে শিশুকাল থেকেই বুঝতে শেখার পর এই স্বপ্ন দেখে। এই ক্যাম্পাসে একদিন পা রাখব এখান থেকে একজন প্রকৌশলী হয়ে বের হব এবং মানুষের মতো মানুষ হবো।
![]() |
নিহত ফাহাদ |
এই তো গত ২০ অক্টোবর আমার ছেলে মুস্তাকিম হোসেন রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলেন। তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে রেখে বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। তিতুমীরে সকালের নাস্তা করেছিলাম। তারপরে একটি সাইনবোর্ড আটকে গেল চোখ, সেই সাইনবোর্ড হল শেরেবাংলা হল সেখানে গিয়ে একটি ছবি তুললাম তারপর অনেকক্ষণ তাকিয়ে দেখলাম।
আজ সকালে প্রেসক্লাবের দিকে যাচ্ছিলাম সকাল ১১ টায়। হাতিরঝিলে অপ্রত্যাশিত পিছন থেকে একটি সিএনজি ধাক্কা দিল মুহূর্তেই চোখে মুখে অন্ধকার দেখলাম পড়ে গেলাম ১৫ থেকে ২০ হাত দূরে। ডান হাত কেটে রক্তাক্ত হলো, বাম পা ডান হাত পা জোর চাপা ব্যথার যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকলাম। পথচারীরা ধরে হাতিরঝিলের একটি চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ পর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেল। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঘরে এসে যখন আমার যন্ত্রণার মধ্যে কাঁকড়াচ্ছিলাম।
তখন খবরে দেখতে পেলাম একটি লাশ। গতকালকে যে ছেলেটি বুয়েট ক্যাম্পাসে হেটে বিরিয়েছে আ সে প্রিয় ক্যাম্পাস বুয়েটে তার হল শেরেবাংলা হলের সিড়িতে মরে পড়ে আছে। রাত দুটো থেকে আড়াই টার মধ্যে তাদের সহপাঠী তাকে ডেকে এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। কি অপরাধ ছিল তার কেউ জানে না। তার ফেসবুকে দেখছিলাম সেখানে ছিল অগাধ দেশ প্রেম ছিল-মানবতা ছিল-মানুষের জন্য ভালোবাসা ছিল।
অনেক স্বপ্ন ছিলো তার চোখে মুখে। অথচ সেই স্বপ্নকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করল, একটি নিষ্পাপ ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করল তারা কারা ? কেন এই হত্যা কান্ড ?? হত্যাকারীদের বিচার কি হবে ??? হত্যাকারীরা যে দলেরই হোক না কেন তাদেরকে খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হবে কি ????
আজকে যে ছেলেটি প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কথা ছিল। যার মা-বাবা অনেক কষ্ট করে অনেক স্বপ্ন দেখে ছেলেকে ভর্তি করেছিল বুয়েটে, আজকে সেখান থেকেই ছেলে বের হলো লাশ হয়ে। কেন ? কেন ?? ছেলের লাশ গ্রহণকালে মা-বাবা হৃদয়ে রক্তক্ষরণ আর যে যন্ত্রনা চলছিল তা কি রাষ্ট্র উপলব্ধি করতে পারবে ?
সৃষ্টির সেরা সেই মানুষগুলো এভাবে মানুষকে কিভাবে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে কি করে ? কয়েক বছর আগে বিশ্বজিতের কথা আপনাদের হয়তো কারো মনে নেই সেই বিশ্বজিৎকে রাস্তায় কুপিয়ে কুপিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। আজও সেই হত্যার বিচার পায়নি। আর এই বিচার না পাওয়ার কারণে অজস্র বিশ্বজিতরা এভাবে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করছে। আমরা নীরব নিথর অবাক হয়ে চেয়ে আছি, কিছুই করতে পারছি না।
হয়তো আজ আমাকেও সিএনজি অপ্রত্যাশিত আঘাত না করে ট্রাক-বাস আঘাত করলে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হতো। একটি সোনালি স্বপ্ন-একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ হয়তো শেষ হয়ে যেত। আল্লাহর অশেষ রহমতে সকলের দোয়ায় বেঁচে গেছি। কিন্তু যে ছেলেটির অনেক স্বপ্ন ছিল কোনো দুর্ঘটনা নয় অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা নয়, তাকে পরিকল্পিতভাবে তার হল থেকে বের করে তাকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে তার কি হবে। যারা এই নির্মম নৃশংস কাজটি করেছে তারাও তো এই প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবী ছাত্র। কিন্তু শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের সংকীর্ণতায় আবদ্ধ হয়ে আজকে তারা কোথায় গিয়ে পৌঁছে গেছে ? তাদের বিবেক, তাদের মানবতা, তাদের মনুষ্যত্ব আজকে কোথায় ? তারা আজকে মানুষ হয়েও অমানুষের মত যে নির্মম আচরণ করছে তাদের প্রতি আমাদের করুণা হয়। আজকে তাদেরকে যারা তৈরি করেছে তারা কি একবারও ভেবেছে আজকে যে ছেলেটি নৃশংসভাবে নির্মমভাবে হত্যা হয়েছে সেই ছেলের তালিকায় তার ছেলেকে থাকতে পারতো। তার নিজের ছেলের যদি এভাবে নির্মম নৃশংস ভাবে হত্যা হতো তখন তিনি কি করতেন তারা ?
ফাহাদের জন্য আমাদের অনেক কান্না। আসুন সবাই মিলে প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসি। যেখানে আছি সেখান থেকেই তার জন্য চিৎকার করে বলি, ও! এখন থাম, এভাবে আর একটি হত্যাকাণ্ড আমরা দেখতে চাই না। আমরা আর একটি রক্তাক্ত লাশ দেখতে চাই না। আমরা মানবতার বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমরা মানুষের বসবাসের বাংলাদেশে যেতে চাই। কবি নির্মল সেরে ভাসায় 'স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই'।
আল্লাহ ফাহাদকে শহীদি মর্যাদা দান করুক এবং সে তার স্ট্যাটাসে দেশপ্রেমের ঐতিহাসিক নিদর্শন রেখে গেছে, সত্য উচ্চারণ করেছে। আজকে আমরা যারা নীরব রয়েছি, এই নীরবতা হয়তো আমাদেরকে একদিন ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে পৌছে দেবে। হয়তো সেদিন আমরা ইচ্ছা করলেও ফিরে আসতে পারবো না। ফাহাদ তার জীবন দিয়ে আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছে, প্রতিবাদ করার যে শিক্ষা, মনুষ্যত্বের যে শিক্ষা, দেশপ্রেমের যে শিক্ষা আসুন সবাই শিক্ষা গ্রহণ করে এগিয়ে যাই। দেশটাকে ভালবাসি, দেশটাকে রক্ষা করি।
(লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি)