ডিআইজির কাছে অভিযোগ করায় বৃদ্ধাকে সিগারেটের ছ্যাকা দিলো ওসি - adsangbad.com

সর্বশেষ


Friday, September 13, 2019

ডিআইজির কাছে অভিযোগ করায় বৃদ্ধাকে সিগারেটের ছ্যাকা দিলো ওসি


বরিশাল প্রতিনিধি:
ওসির বিরুদ্ধে জিআইজির কাছে অভিযোগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে সাবেক এক পুলিশ সদস্যর বিধবা স্ত্রীকে থানার মধ্যে বসে প্রকাশ্যে মারধর করে আহত করেছে জেলার উজিরপুর মডেল থানার বহুল বির্তকিত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শিশির কুমার পাল। একইসাথে মারধরের পর রাশিদা বেগম (৬০) নামের ওই বৃদ্ধার গালে সিগারেটের আগুনের ছ্যাকা দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে ওসি’র ড্রাইভার পুলিশ সদস্য জাহিদ হোসেন। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (১১ সেপ্টম্বর) সন্ধ্যায়।
এ ঘটনার পরপরই নির্যাতনের শিকার ওই বৃদ্ধা থানা সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানের সামনে চিৎকার করে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর ওসির হাতে মারধরের শিকার বৃদ্ধা রাশিদা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, জাহিদ পুলিশ এই চায়ের দোকানে (থানা সংলগ্ন পশ্চিম পার্শ্বে বাচ্চুর দোকান) বসে আমার গালে সিগারেটের আগুনের ছ্যাকা দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। দেয়ালের সাথে আমার মাথা ঠুকিয়েছে। পিঠে ও ঘাঁড়ে ছয় থেকে সাতটি ঘুষি দিয়েছে। পাশের লোকজন ও দোকানদার না থাকলে আমাকে মেরেই ফেলতো।
রাশিদা বেগম আরও বলেন, জাহিদ পুলিশের হাতে মারধরের শিকার হয়ে আমি সাথে সাথে থানার মধ্যে ওসি শিশির কুমার পালের রুমে গিয়ে বিষয়টি জানাই। এ সময় সেখানে উপস্থিত থানার আরও একজন পুলিশ সদস্য ওসিকে বলে স্যার ঘটনাটি সত্য। এ কথা শোনার পরই ওসি শিশির কুমার চেয়ার থেকে উঠে আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করে তার কক্ষ থেকে ঘার ধরে বের করে দিয়েছে।
বৃদ্ধা রাশিদা জানান, তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলার পানিচত্বর এলাকার বাসিন্দা। তার স্বামী মঈন উদ্দিন মাতুব্বর একজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পূর্বে তার স্বামী দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় মারা যায়। কিছুদিন পরে তার দুই ছেলেও মারা যায়। স্বামী ও দুই ছেলের মৃত্যুর পর বৃদ্ধা রাশিদার বরিশাল পুলিশ বু্যুরো ইনভেস্টিকেশন (পিবিআই) অফিসে চাকরি হয়। সে সুবাদে রাশিদা উজিরপুর উপজেলার ইচলাদী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তির ভাড়া বাসায় তার কন্যাকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন।
বৃদ্ধা রাশিদা আরও জানান, প্রায় এক মাস আগে ওই ভাড়া বাসা থেকে স্থানীয় বখাটে শুক্কুর আলী, বোরহান উদ্দিন, আনিচুর রহমানসহ কয়েকজন বখাটে তার মেয়েকে অপহরন করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ গত ২৪দিন আগে তার মেয়েকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে পুলিশ সংবাদ দিয়ে তাকে থানায় ডেকে মেয়েকে বুঝিয়ে দেন। এ সময় বৃদ্ধা রাশিদা থানার ওসি শিশির কুমার পালকে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন। কিন্তু ওসি তাকে বলে আপনার মেয়ে পেয়েছেন আপনি চলে যান বিচার হয়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতে থানা থেকে মেয়েকে নিয়ে বৃদ্ধা রাশিদা বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে পথিমধ্যে পূর্বের অভিযুক্তরাই আবার তার মেয়েকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তখন পুর্নরায় থানায় আসলে ওসির কথানুযায়ী অভিযোগ লিখে জমা দেয়া হয়। কিন্তু তাতেও কোনো সুফল না পেয়ে পরেরদিন নতুন করে আবার একটি অভিযোগ দিলে ওসি রাশিদার সামনে বসেই অভিযোগ ছিঁড়ে ফেলে দেন।
বৃদ্ধা রাশিদা বেগম বলেন, আমি তিনবার অভিযোগ লিখে ওসির কাছে দিয়েছি। প্রত্যেকবারই ওসি আমার সামনে বসেই অভিযোগ ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে বলেন-এসব নিয়ে সময় নষ্ট করা সম্ভবনা। অপরদিকে মেয়েকে ছিনিয়ে নেওয়া ওইসব বখাটেদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়ার অভিযুক্তদের স্বজনরা তার (রাশিদা) ভাড়া বাসায় তালা ঝুঁলিয়ে দেয়।
পরবর্তীতে উপায়অন্তুর না পেয়ে অতিসম্প্রতি বৃদ্ধা রাশিদা বেগম বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির সাথে সাক্ষাত করে তাকে পুরো ঘটনাটি জানিয়ে ওসি শিশির কুমার পালের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষনিক রেঞ্জ ডিআইজি উজিরপুর থানার ওসি শিশির কুমারকে ফোন করে বৃদ্ধা রাশিদাকে আইনী সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি তার ভাড়া বাসা থেকে মালামাল উদ্ধারের জন্য কঠোর নির্দেশ প্রদান করেন।
রাশিদা আরও বলেন, ডিআইজি স্যারের কাছে যাওয়ার পরে ওসি বুধবার (১১ সেপ্টম্বর) সন্ধ্যায় আমাকে থানায় ডেকে আনেন। সন্ধ্যায় আমি থানায় ওসির সাথে দেখা করতে তার রুমে গেলে তিনি বলেন, আপনি একটু পরে আসেন, আপাতত থানার বাহিরে চায়ের দোকানে গিয়ে বসেন। ওসির কথানুযায়ী রাশিদা তার রুম থেকে বেড়োতেই ওসির ড্রাইভার পুলিশ সদস্য জাহিদ হোসেন তাকে বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাসা করলে তিনি (রাশিদা) জানায় মাদারীপুর। পরবর্তীতে থানার সামনের চায়ের দোকানে গিয়ে বসার পর ওই পুলিশ সদস্য জাহিদ ফের রাশিদাকে বলে আপনার বাড়ি কোথায়, এখানে কি? এ সময় বৃদ্ধা রাশিদা বলেন-‘কয়েকবার তো বললাম মাদারীপুর, শোনেনি।’ এরপরই পুলিশ সদস্য জাহিদ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে (রাশিদা) মারধর করে গালে সিগারেটের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নির্যাতিতা বৃদ্ধা রাশিদা বেগমের দাবী, রেঞ্চ ডিআইজির কাছে ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় থানার ওসি শিশির কুমার পাল তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে পুলিশ সদস্য জাহিদকে দিয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। জাহিদ পুলিশের হাতে মারধরের শিকার হয়ে সাথে সাথে থানার মধ্যে ওসি শিশির কুমার পালের রুমে গিয়ে রাশিদা বেগম বিষয়টি জানান। ওইসময় দ্বিতীয় দফায় রাশিদা বেগমকে মারধর করেন ওসি শিশির কুমার পাল।
নিজ হাতে মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে উজিরপুর মডেল থানার ওসি শিশির কুমার পাল সাংবাদিকদের জানান, থানার বাহিরে কি হয়েছে কিংবা কে রাশিদা বেগমকে মারধর করেছে তা আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages