ব্লাংক চেক দিয়ে তিনি এখন শত কোটি টাকার মালিক! - adsangbad.com

সর্বশেষ


Friday, September 13, 2019

ব্লাংক চেক দিয়ে তিনি এখন শত কোটি টাকার মালিক!

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রতারক মশিউর রহমান শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। কয়েক বছর ধরে রাজধানীর গুলশান, বনানী ও উত্তরায় আলিশান অফিস দেখিয়ে, প্রাডো গাড়িতে চড়ে এবং পাঁচতারকা হোটেলে ব্যবসায়ী মিটিং করে তিনি প্র’তারণার ফাঁদ পেতে আসছিলেন।
পণ্যের দামের মাত্র ১০ ভাগ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করে লাখ লাখ টাকার পণ্য বাকিতে নিয়ে ব্যাংক চেক দিতেন প্রতারক মশিউর। এরপর এলাকা পরিবর্তন করে অন্য এলাকায় তিনি নতুন নামে অফিস গড়ে তুলতেন।
মশিউরের প্র’তারণা থেকে বাদ যায়নি বসুন্ধরা গ্রুপ, বেঙ্গল গ্রুপ, এলজি বাটার ফ্লাই, ইলেকট্রনিক্স দোকান এএস ইন্টারন্যাশনালের মালিকসহ একাধিক ব্যক্তি।
বুধবার রাজধানীর সবুজবাগ থেকে এ চতুর প্রতারককে জাল টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ গ্রে’ফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের খিলগাঁও জোনাল টিম।
তাকে গ্রে’ফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসে। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ডিবি অফিসে ছুটি আসেন কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ ভুক্তভোগীরা।
ডিবি জানায়, শুধু ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় মশিউরের বিরুদ্ধে ১৫টি প্র’তারণার মামলা ও ১১টি চেক জা’লিয়াতির মামলা রয়েছে। এছাড়া নিজ জেলা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে।
এসব মামলায় ও’য়ারেন্টও হয়েছে। এছাড়া আটটি মামলায় তার সাজা হয়েছে। এ প্র’তারণার সঙ্গে তার স্ত্রী সাবরিনা রহমানও জড়িত। এছাড়া রেজাউর রহমান ও ফারুক ওরফে ইঞ্জিনিয়ার বেলাল এ প্র’তারক চক্রের সদস্য। তাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে ডিবি।
গুলশান থানায় বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, আব্রার ট্রেডার্স কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান বেঙ্গল গ্রুপের লিনেক্স ইলেকট্রনিক্স বিডি লিমিটেড থেকে বিভিন্ন মডেলের ১৫০ এলইডি টিভি, দুটি মাইক্রো ওভেন ও একটি ফ্রিজ, একটি এয়ার কন্ডিশনসহ ৪৯ লাখ টাকার পণ্য কেনেন।
সিটি ব্যাংকের ২৩ লাখ টাকার একটি চেক দেন। বাকি টাকা পরবর্তী সময়ে পরিশোধের কথা বলেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দেয়ার পর ব্যাংক থেকে জানানো হয়, অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই।
পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দু-একদিনের মধ্যে টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে দেব। কিন্তু টাকা জমা না দিয়ে নিজ অফিসে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের খিলগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান বলেন, মশিউরের বি’রুদ্ধে একাধিক প্র’তারণা মামলায় গ্রে’ফতারি পরোয়ানা ছিল। তার বি’রুদ্ধে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় ১৫টি প্র’তারণার মামলা এবং ১১টি চেক জালিয়াতির মামলা রয়েছে।
শাহজাদপুর এলাকার ফার্নিচার ব্যবসায়ী ভুক্তভোগী মো. শিমুল মিয়া বলেন, ১০ ভাগ টাকা অগ্রিম দিয়ে সাত লাখ টাকার ফার্নিচার নেন মশিউর। পরবর্তী সময়ে কয়েক ধাপে তিন লাখ টাকা দিলেও আরও চার লাখ টাকা বাকি রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ছোট ব্যবসায়ী। এ প্র’তারকের পাল্লায় পড়ে আমার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, অভিজাত এলাকায় অফিস ভাড়া নিয়ে প্র’তারণা করে আসছিলেন মশিউর। কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ লাখ টাকার পণ্য কিনে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিতেন। অগ্রিম হিসেবে ১০ ভাগ টাকা দিতেন।
এভাবে এক একটি অফিস খুলে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে টার্গেট করে টাকা হাতিয়ে মশিউর ও তার সদস্যরা অফিস ছেড়ে পালাতেন। তদন্ত কর্মকর্তারা আরও বলেন, এক বছর আগে একটি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫৭ লাখ টাকার সিমেন্ট কেনে এ প্রতারক চ’ক্র।
ওই প্রতিষ্ঠানটি এখনও ৪০ লাখ টাকা পাবে। সম্প্রতি নতুন প্র’তারণা শুরু করে তারা। সিরাজগঞ্জের কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ভুট্টা, গমসহ কৃষিপণ্য কেনা শুরু করে।
২০ হাজার টাকা নগদ দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে লাখ টাকার পণ্য নিয়ে এসে বাজারে বিক্রি করে দিত। এভাবে অনেক কৃষকের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের নিঃস্ব করে দেয় চক্রটি।
এক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও ভু’ক্তভোগী আজম খান বলেন, কখনও আব্রার ট্রেডার্স, কখনও জাহান গ্রুপের নাম ব্যবহার করতেন মশিউর। আর এসব গ্রুপের অধীনে এডিবেল অয়েল, কনজুমার প্রডাক্ট টেলিকমিউনিকেশন, বিল্ডার্স লিমিটেডসহ অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভু’য়া এসব প্রতিষ্ঠানের নামে শতকোটি টাকা হা’তিয়ে নিয়েছে এ প্র’তারক চক্র।
নওগাঁর জাহান অটো রাইস মিলের মালিক গোলাম মোস্তফা জানান, তার কাছ থেকে এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা হা’তিয়ে নিয়েছেন মশিউর। চাল বিক্রির কথা বলে এ টাকা হা’তিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তী সময় টাকা আদায় না করতে পেরে নওগাঁ ও রাজধানীর পল্টন থানায় মামলা করেন প্র’তারণার শিকার মোস্তফা।
খিলগাঁও অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিন মাস ধরে মশিউরের সন্ধান করছিলেন তারা। বুধবার জাল টাকার একটি লেনদেন করার সময় তাকে গ্রে’ফতার করা হয়।
তিনি বলেন, ২০-২৫ বছর ধরে মশিউর প্রতারণা করে আসছেন। উত্তরা, বনানী, নিকুঞ্জ, শান্তিনগর ও পল্টনে বিভিন্ন সময় তার কার্যালয় ছিল বলে তারা জানতে পেরেছেন। শাহিদুর রহমান আরও বলেন, পাঁচ থেকে সাতজনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র প্র’তারণা করে আসছে। অন্যদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages